স্টাফ রিপোর্টার”
রাজবাড়ী, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০: “আমরা আওয়ামী লীগের সাথে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। ভোটের অধিকার ছিনিয়ে এনেছি। আজকে কেন মানুষ ভোটকেন্দ্রে যাবেন না, সেটা খুঁজে বের করতে হবে।
ভোটের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমে যাওয়াকে গণতন্ত্রের জন্য ‘চরম বিপদ’ সংকেত। আজকে সকল গণতান্ত্রিক দল, আওয়ামী লীগ এবং নির্বাচন কমিশনকে আহ্বান জানাব ভোটের প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনুন। সংগ্রামী জনগণকে আহ্বান জানাব আপনাদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনুন।” শনিবার রাজবাড়ী রেলগেট শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি চত্বরে এক বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি এসব কথা বলেন।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে কম ভোট পড়াকে গণতন্ত্রের জন্য বিপদ অবিহিত করে এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।
রাশেদ খান মেনন বলেন, বাংলার মানুষ ভোটকে রক্ষার জন্য জীবন দিয়েছিল, মুক্তিযুদ্ধ করেছিল। যেই বাংলার মানুষ ভোটকে উৎসব মনে করে, সেই বাংলার মানুষের ভোটের প্রতি আগ্রহ নেই কেন?
সিটির এ নির্বাচনে উত্তর ঢাকায় ২৫ দশমিক ৩০ শতাংশ ও দক্ষিণ ঢাকায় ২৯ দশমিক ০২ শতাংশ ভোট পড়ে। গড়ে দুই সিটিতে ভোট পড়ে ২৭ দশমিক ১৫ শতাংশ।
গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে সমালোচনার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এই নির্বাচন নিয়ে আমি কথা বলেছিলাম। তারজন্য আমার বিরুদ্ধে প্রচণ্ড কুৎসা রটানো হয়েছিল।
“আমার কথায় প্রমাণিত-এই বাংলাদেশ আজকে আর ভোটের জায়গায় নেই।”
গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে বলে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো সমালোচনা করে আসছে। এক পর্যায়ে বরিশালে এক অনুষ্ঠানে মেনন বলেছিলেন, “আমিও নির্বাচিত হয়েছি। তারপরও আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, ওই নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেনি। এমনকি পরবর্তীতে উপজেলা এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও ভোট দিতে পারেনি দেশের মানুষ।”
‘সরকার কথা রাখেনি’। ‘ঘরে ঘরে চাকরি দেওয়ার’ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী ওয়াদার দাবি করে মেনন বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ওয়াদা করেছিল প্রতি ঘরে ঘরে যুবকদের চাকরি দেবে কিন্তু সরকার তাদের কথা রাখেনি।

“যুবকরা পড়াশোনা শেষ করে চাকরির নিশ্চয়তা পায় না।
“আজ বাংলাদেশে এক কোটি ৬ লাখ মানুষ বেকার। বাংলার যুবকের চাকরি নেই। ওই বেকার যুবক তখন জমিজমা বিক্রি করে বিদেশ যাওয়ার চেষ্টা করে। নারী কর্মীরা নিগৃহীত হয়ে ফিরে আসতে বাধ্য হয়। ওই বর্বররা আমার দেশের মা বোনেদের ইজ্জত লুণ্ঠন করে।”
তবে বাংলাদেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলার ব্যাপারে তার ‘কোন সন্দেহ নেই’ উল্লেখ করে রাজবাড়ী জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি জ্যোতিশংকর ঝন্টুর সভাপতিত্বে এ সভায় রাশেদ খান মেনন বলেন, গত ১০ বছর আমরা আওয়ামী লীগের সাথে থেকে সেই উন্নয়নের অংশীদার।
“কিন্তু সাধারণ মানুষ যদি উন্নয়নের সুফল ভোগ করতে না পারে, তাহলে জোট থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে হবে।”
মেনন বলেন, সৌদি আরবের মানুষরা হল পিশাচ। কাজের কথা বলে তাদের দেশে নিয়ে গিয়ে আমাদের মা-বোনদের ধর্ষণ করছে। তারপরও নারীদের সেখানে পাঠানো হচ্ছে।
সদ্য সমাপ্ত সিটি নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, দেশের মানুষ ভোটের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। সদ্য অনুষ্ঠিত ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে এই চিত্র দেখা গেছে। ২০-২৫ শতাংশের বেশি ভোট পড়েনি।
অথচ বলা হচ্ছে, উন্নয়নের জোয়ারে দেশ ভেসে যাচ্ছে। উচিত কথা বললে কুৎসা রটানো হচ্ছে। গণতন্ত্রকে অর্থবহ করে তুলতে হলে জনগণের ভোটের প্রতি আগ্রহ ফিরিয়ে আনতে হবে।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বলেন, রাজবাড়ী জেলা পাটের জন্য বিখ্যাত হলেও এ জেলার কৃষকরা পাটের দাম পাচ্ছেন না। একইভাবে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না। অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে বেগবান করতে সবাইকে ওয়ার্কার্স পার্টির পতাকাতলে সমবেত হতে হবে।
ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য ও রাজবাড়ী জেলা শাখার সভাপতি কমরেড জ্যোতি শংকর ঝন্টুর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রেজার পরিচালনায় জনসভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য কমরেড আনিসুর রহমান মল্লিক, জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা কমরেড মওলা বক্স, কমরেড আরবান আলী, কমরেড দেলোয়ার হোসেন, ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা ও বরাট ইউপির চেয়ারম্যান কমরেড মনিরুজ্জামান সালাম, জেলা নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি গোলাম কাদের প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
জনসভায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ, দেশে ক্রমবর্ধমান বৈষম্য ও অর্থনৈতিক লুটপাট বন্ধ করা, ধানসহ কৃষকের ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণ, সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা, দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধসহ বিভিন্ন দাবি জানানো হয়।