শেখ জুয়েল রানা (প্রতিনিধি)
শ্রীমঙ্গল, ৩০ জানুয়ারি ২০২০: ‘অবাধ তথ্য প্রবাহ নিশ্চিত না হলে মানুষের মৌলিক অধিকার পূরণ সম্ভব নয়। জনগণের তথ্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করা হলে সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের সেবা প্রদানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠিত হবে।’ ‘তথ্যই শক্তি: জানবো জানাবো, দুর্নীতি রুখবো’ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে শ্রীমঙ্গলে তথ্যমেলায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধান তথ্য কমিশনার মরতুজা আহমদ এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, এভাবেই দেশে দুর্নীতি হ্রাস পাবে, সুশাসন এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত হবে। তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করতে তথ্য দাতা ও গ্রহিতাদের ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। দেশে তথ্য অধিকার আইনের প্রয়োগ সফল হলে দেশ অনেক এগিয়ে যাবে। তথ্য পাওয়া যে মানুষের মৌলিক অধিকার সেই বিষয় সম্পর্কে মানুষকে জানাতে হবে। তিনি তথ্য আইন বাস্তবায়ন ও জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিতে সাংবাদিকদের গঠনমূলক ভূমিকা পালনের আহবান জানান।
৩০ জানুয়ারী বৃহস্পতিবার সকালে স্থানীয় জেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রশাসন, সচেতন নাগরিক কিমিটি (সনাক)-এর যৌথ আয়োজনে এবং দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) হবিগঞ্জ সমন্বিত জেলা কার্যালয় ও উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি (দুপ্রক)-এর সহযোগিতায় দিনব্যাপী এ মেলার উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রধান তথ্য কমিশনার মরতুজা আহমদ।
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক)-এর শ্রীমঙ্গলের সভাপতি সৈয়দ নেছার আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মেলায় বিশেষ অতিথি ছিলেন মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক বেগম নাজিয়া শিরিন, পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ পিপিএম (বার), টিআইবির চেয়ারম্যান ড. ইফতেখারুজ্জামান, শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার নজরুল ইসলাম, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) আশরাফুজ্জামান প্রমূখ।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, সনাক, স্বজন, ইয়েস সদস্যসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার প্রতিনিধিরা এবং অারপি নিউজ ও দৈনিক ‘বাংলাদেশ প্রতিক্ষণ’সহ জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
দুর্নীতি বিরোধী সচেতনতামূলক এ মেলায় সরকারি-বেসরকারি অর্ধ শতাধিক স্টলে সাধারণ মানুষকে বিনামূল্যে তথ্য প্রদান ও পরামর্শ বিষয়ে সেবা প্রদান করা হয়।
‘তথ্যই শক্তি: জানবো জানাবো, দুর্নীতি রুখবো’ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে তথ্যমেলা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে অামাদের প্রতিনিধিকে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য, অারপি নিউজের প্রধান সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ অামিরুজ্জামান বলেন, “দুর্নীতির কারণে আয় বৈষম্য বাড়ছে। দুর্নীতিতো বিদ্যমান শোষণ-লুণ্ঠনমূলক ব্যবস্থার কারণেই হচ্ছে। দুর্নীতি রুখতে হলে, ব্যবস্থা পাল্টাতে হবে। অার এইজন্যই সামাজিক ন্যায্যতা ও সমতা প্রতিষ্ঠার জন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক জনগণতান্ত্রিক অাধুনিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার সংগ্রামকে জোরদার করতে হবে। এর বিকল্প নাই।
বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ৩৬টি ধনী দেশের সংগঠন ‘অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি) তাদের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, বিশ্বব্যাপী আয় বৈষম্য দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অধিকাংশ দেশেই অতি বিত্তবানের সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। একইসঙ্গে সমাজে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষের সংখ্যা কমছে। এ প্রবণতা অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং এর সমাধান করা না গেলে আগামীতে বিশ্বব্যাপী অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হতে পারে।
যেহেতু মধ্যবিত্ত শ্রেণিই গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি; তাই আগামীতে ইউরোপীয় গণতান্ত্রিক দেশগুলোয় এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। ব্রিটেনের ৬০ শতাংশ মানুষই মধ্যবিত্ত।
তারা বর্তমানে নাজুক অবস্থার মধ্যে রয়েছে। ব্রিটেনের মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর এক-তৃতীয়াংশই মাসের খরচ চালানোর ক্ষেত্রে হিমশিম খাচ্ছে। গত এক দশকে দেশটির শীর্ষস্থানীয় এক শতাংশ পরিবারের বার্ষিক আয় বেড়েছে ১১ থেকে ২০ শতাংশ।
কিন্তু মধ্যবিত্ত শ্রেণির পরিবারের আয় বেড়েছে খুব সামান্যই। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের আয় হ্রাস পাওয়ার প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। মধ্যবিত্ত পরিবারের স্বপ্ন হচ্ছে- একটি বাড়ি, সন্তানের উচ্চশিক্ষা এবং চাকরির সুযোগ নিশ্চিত করা।
কিন্তু ব্রিটেনে বাড়ি এবং সন্তানের উচ্চশিক্ষা উভয়ই কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনকি চাকরির ব্যবস্থা করা এখন আর আগের মতো সহজসাধ্য নয়। তাই মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের মাঝে উদ্বেগ দিন দিন বাড়ছেই।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণা সংস্থা এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছিল, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অতি ধনীর সংখ্যা বাড়ছে। এ বৃদ্ধির তালিকায় সবার উপরে রয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে অতি ধনীর সংখ্যা বাড়ছে ১৭ শতাংশ হারে। এ হার গবেষণাধীন ৭৫টি দেশের মধ্যে সবার শীর্ষে।
অামাদের দেশে লুটেরা প্রকৃতির অতি ধনীক বনিকের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র মানুষের আয় কমছে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সময়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় ৫ শতাংশ পরিবারের আয় বেড়েছে ৫৭ শতাংশ। একই সময়ে অতি দরিদ্র ৫ শতাংশ পরিবারের আয় হ্রাস পেয়েছে ৫৯ শতাংশ।
বিশ্বব্যাপী আয় বৈষম্য দ্রুত বাড়ছে। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোয় আয় বৈষম্য বৃদ্ধির প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। আমরা যদি অামাদের অর্থনীতির প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করি, তাহলে এ বক্তব্যের সত্যতা উপলব্ধি করা যাবে।
অামাদের দেশ সাম্প্রতিক বছরগুলোয় অপ্রতিরোধ্য গতিতে অর্থনৈতিক উন্নয়ন অর্জন করে চলেছে। গত প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে অামাদের দেশ সাড়ে ৬ শতাংশ হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।
গত অর্থবছরে বাংলাদেশ ৭.৮৬ শতাংশ হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। চলতি অর্থবছরে এ জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার প্রথমবারের মতো ৮ শতাংশ অতিক্রম করে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অর্থমন্ত্রী বিভিন্ন পর্যায়ে দাবী করে বলেছেন, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশ ৮.১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে। এ বছর বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী ৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ হবে অন্যতম। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে প্রথম অথবা দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করবে। বাংলাদেশ সার্ক দেশগুলোর মধ্যে অর্থনীতির অনেক সূচকে ভারতের পরেই অবস্থান করছে।
বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশ ইতিমধ্যে ২৬তম বৃহৎ শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে উন্নয়নশীল দেশের প্রাথমিক মর্যাদা লাভ করেছে।
২০২৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশ চূড়ান্তভাবে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উঠে আসবে। এগুলো আমাদের অর্থনৈতিক সাফল্যের চাবিকাঠি। কিন্তু তারপরও কি আমরা বলতে পারব- বাংলাদেশের সব মানুষের জন্য আমরা অর্থনৈতিক অর্জনের সুফল ন্যায্যতার ভিত্তিতে বণ্টন করতে পেরেছি? যেহেতু আমরা অর্থনৈতিক অর্জনের সুফল প্রাপ্তি সবার জন্য ন্যায্যতার ভিত্তিতে নিশ্চিত করতে পারিনি; তাই ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান বেড়েই চলেছে।
বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদন থেকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বৈষম্যের চিত্র ফুটে উঠেছে। অথচ আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ অথবা মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম চেতনা ছিল অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করে সবার জন্য এমন একটি সমাজব্যবস্থা নিশ্চিত করা; যেখানে সবাই তার প্রাপ্য অধিকার ভোগ করতে পারবে।
সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, বিত্তবান এবং বিত্তহীনের ব্যবধান বৃদ্ধি পাচ্ছে আশঙ্কাজনকভাবে। গিনি কোয়েফিশিয়েন বা গিনিসহগ দিয়ে এটা পরিমাপ করা হয়। বিত্তবান-বিত্তহীনের ব্যবধান দশমিক ৪ পর্যন্ত সহনীয় বলে মনে করা হয়।
আমাদের দেশে এটা বর্তমানে দশমিক ৫-এর কাছাকাছি রয়েছে। এটা অসহনীয় একটি অবস্থা। এখন প্রশ্ন হল, একটি দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থায় ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য বৃদ্ধি পায় কেন? সমাজে যখন ন্যায়-অন্যায়ের কোনো ব্যবধান থাকে না, দুর্নীতি আর অসৎ পন্থাই অর্থ আয়ের প্রধান হাতিয়ার হয়ে দাঁড়ায়; তখন সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য বাড়তে থাকে। সমাজের প্রত্যেকটি মানুষ যদি সৎভাবে উপার্জন করে, তাহলে অর্থনৈতিক বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করতে পারে না।
এক্ষেত্রে একটি উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। মনে করি, দুজন ব্যক্তি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন একটি প্রতিষ্ঠানে ৬০ হাজার টাকা মাসিক বেতনে চাকরি করেন। তারা যদি প্রাতিষ্ঠানিক বৈধ সুযোগ-সুবিধার বাইরে কোনো অর্থ উপার্জন না করেন, তাহলে তাদের মধ্যে আয় বৈষম্য সৃষ্টি হওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না।
কিন্তু একজন যদি সৎভাবে জীবনযাপন করেন এবং অন্যজন দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হন; তাহলে যিনি দুর্নীতিতে নিমিজ্জিত হবেন, তার আয় বাড়বে। ফলে সৎ ব্যক্তির সঙ্গে তার অর্থনৈতিক বৈষম্য বৃদ্ধি পাবে। আমাদের দেশে সৎভাবে জীবিকা নির্বাহ করে কোটিপতি হওয়ার তেমন কোনো সুযোগ নেই বললেই চলে। কিন্তু দেশে শত শত কোটিপতি দেখতে পাওয়া যায়, যাদের বৈধ আয়ে কোটিপতি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারী বা চাকরিজীবী যখন ৪০০ কোটি টাকা পেইডআপ ক্যাপিটাল দিয়ে একটি ব্যাংক স্থাপনের অনুমোদন গ্রহণ করেন; তখন তার টাকার উৎস জানতে চাওয়া হয় না।
বস্তুত আমাদের সমাজে জবাবদিহিতার বড় অভাব পরিলক্ষিত হয়। কেউ একজন যদি রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনায় সরকার সমর্থক হন; তাহলে তো তার কোনো অপরাধই অপরাধ বলে গণ্য হয় না।
একজন চেয়ারম্যান রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করলেও তাকে আইনি কাঠামোর আওতায় আনা যায় না। পরিশীলিত চর্চার মাধ্যমে একজন পেশাজীবীকে গড়ে উঠতে হয়।
কিন্তু পরিচর্যা ছাড়া যদি শুধু পেশিশক্তির বলে কেউ একজন পেশাজীবী হয়ে উঠেন; তাহলে তার কাছ থেকে কখনই সততা-নৈতিকতা আশা করা যায় না। আমাদের দেশে সামাজিক মূল্যবোধেরও অধঃপতন ঘটেছে।
আগেকার দিনে একজন দুর্নীতিবাজ বা ঘুষখোর ব্যক্তির সঙ্গে কেউ সামাজিক সম্পর্ক স্থাপন করতে চাইত না, যত বিত্তই তার থাকুক না কেন! কিন্তু এখন আর সেসব দেখা হয় না। টাকা থাকলেই এখন সবকিছু করা সম্ভব। টাকাই এখন সামাজিক মর্যাদা নির্ধারণের মাপকাঠি।
প্রধানমন্ত্রী কিছুদিন আগে এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, আপনাদের বেতন-ভাতা বাড়িয়ে দিলাম; তারপর কেন দুর্নীতি করবেন? এটা ঠিক যে, সর্বশেষ বেতন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা যেভাবে বাড়ানো হয়েছে, তা অনেকটাই অবিশ্বাস্য। কিন্তু তারপরও কি দুর্নীতি বা ঘুষ গ্রহণের প্রবণতা কমেছে? এই না কমার পেছনে কাজ করছে রাতারাতি বিত্তবান হওয়ার উদগ্র বাসনা।
অভাবে নয়, মানুষ দুর্নীতি করে স্বভাবে; দ্রুত বিত্তের পাহাড় গড়ে তোলার আশায়। যেহেতু বৈধপথে বিত্ত-বৈভব গড়ে তোলার সম্ভাবনা থাকে না; তাই অনেকেই অবৈধ পথে বিত্ত গড়ে তোলার প্রতিযোগিতায় মত্ত হয়।
এভাবে তারা নিজের ভাগ্য গড়ে তোলার আশা বা প্রচেষ্টায় অন্যের ‘হক’ নষ্ট করে। তারা নানাভাবে প্রাতিষ্ঠানিক স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করে হলেও নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারে তৎপর থাকে।
বাংলাদেশ যদি দুর্নীতিকে সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে পারত, তাহলে অনেক আগেই উন্নত দেশের তালিকায় স্থান করে নিত। বাংলাদেশ সব সম্ভবের দেশ। এ দেশের মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। কিন্তু তাদের সঠিকভাবে গাইড করার মতো কেউ নেই।
নানাভাবে আমাদের সৃজনশীলতা ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে। একদিকে মানুষ বিত্তের পাহাড় গড়ে তুলছে; অন্যদিকে বঞ্চিতের সংখ্যা বাড়ছে। রাজধানীর অভিজাত হোটেলে গেলে বোঝা যায় কিছু মানুষ কী পরিমাণ টাকার মালিক হয়েছে! এর বিপরীতে সাধারণ মানুষ কতটা অসহায় অবস্থার মধ্যে আছে, তার খবর আমরা ক’জনই বা রাখি।
ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ করে একশ্রেণীর ঋণগ্রহীতা তা বিদেশে পাচার করছে। এদেরকে অামরা বলি ‘লুটেরা ধনিক শ্রেণি। আর স্থানীয়ভাবে উদ্যোক্তারা ঋণের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরলেও ঋণ পাচ্ছে না। টাকা ছাড়া কোনো কাজই হয় না। বর্তমান সরকারের অন্যতম নির্বাচনী অঙ্গীকার হচ্ছে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করা।
কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এটা শুধু কথার কথাই থেকে যাবে। কারণ দুর্নীতির বিরুদ্ধে এখনও দৃশ্যমান তেমন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। আর দুর্নীতিবাজরা অত্যন্ত শক্তিশালী। তারা যে কোনো পরিস্থিতি ম্যানেজ করতে পারে।
ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান কমাতে হলে সবার আগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। দুর্নীতি রুখতে হলে, ব্যবস্থা পাল্টাতে হবে। অার এইজন্যই সামাজিক ন্যায্যতা ও সমতা প্রতিষ্ঠার জন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক জনগণতান্ত্রিক অাধুনিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার সংগ্রামকে জোরদার করতে হবে। এর বিকল্প নাই।একইসঙ্গে উৎপাদনশীল বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে ব্যাপকভিত্তিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। আমাদের জনসংখ্যাকে কার্যকর জনসম্পদে পরিণত করতে হবে। প্রতিটি হাত উৎপাদনশীল কাজে ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।”
