স্টাফ রিপোর্টার” শেখ জুয়েল রানা’
ঢাকা, ২১ মার্চ ২০২০: করোনা ভাইরাস আতঙ্ক সৃষ্টি ও ব্যবহার করে বাংলাদেশে অসাধু ব্যবসায়ীদের চক্র বাজার সিন্ডিকেট করে ইতোমধ্যে দ্রব্যমূল্য নিয়ে যে কালোবাজারী এবং নিয়ন্ত্রণহীন মুনাফায় লিপ্ত হয়েছে অচিরেই তা খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সরবরাহের ক্ষেত্রে সংকট সৃষ্টি করবে। একই সঙ্গে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে বাজার থেকে অধিক পণ্য কেনাও একই পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো এই পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে সরকার সংকট মোকাবেলা করার সমন্বিত সক্ষমতা প্রদর্শন করতে পারছে না। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও তার মন্ত্রীদের অতিকথন পরিস্থিতিকে আরো ঘোলাটে করছে। বাস্তবতার সঙ্গে তাদের কথা ও কাজ মিলছে না। করোনা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় উপকরণ স্বাস্থ্য কর্মীদের প্রদান করা হয়নি। এমনকি নূন্যতম যে প্রশিক্ষণ লাগে, সে ব্যবস্থাপনাও গড়ে তোলা যাচ্ছে না। চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্য কর্মীরা প্রস্তুতির অভাবে নিজেরাই আতঙ্ক এবং মানসিক পীড়ায় আছেন। দিন আনা দিন খাওয়া শ্রমজীবি মানুষ ইতোমধ্যেই কর্ম হারিয়েছেন। “সরকার সব প্রস্তুতি আছে” বলে যে গোজাঁমিলের বক্তব্য দিচ্ছে, তাতে পরিস্থিতির মোকাবেলা করা যাবে না। এভাবে চললে সব কিছুই নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাবে।

ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো সুনিদিষ্টভাবেই মনে করে চীন, দক্ষিণ কোরিয়া যেভাবে সংকট মোকাবেলা করেছে সেই পথে অত্যন্ত বলিষ্টতার সংগে সারাদেশ ১৫ দিনের জন্য লকডাউন করে জনগণের খাদ্য, চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা ও শ্রমজীবি দরিদ্র মানুষের প্রতিদিনের খাদ্য চাহিদার পরিপূরণের ব্যবস্থা করবে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ এভাবেই পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে এবং বর্তমান সরকারের সেই সক্ষমতাও আছে। এ ব্যাপারে কোন দ্বিধাদ্বন্দের অবকাশ নেই। জনগণ করোনা নিয়ন্ত্রনে সরকারের বলিষ্ঠ ভূমিকা কামনা করছে। জনগণের প্রতি ওয়ার্কার্স পার্টি আহবান জানিয়ে বলেছে, মহামারি পরিস্থিতি সৃষ্টির আগেই সকল অঞ্চলে করোনা নিয়ন্ত্রণের যে সকল নির্দেশাবলী ইতোমধ্যে ঘোষিত হয়েছে তা নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করতে হবে। নিজেদের সংক্রমণ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
গরীব মানুষের জন্য চিকিৎসা সহায়তা ও খাদ্য নিরাপত্তার পরিপূর্ণ ব্যবস্থা গ্রহণ করে করোনা মহামারী রোধে এখনই ১৫ দিনে জন্য দেশকে লকডাউন করার দাবী জানিয়ে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য, অারপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ অামিরুজ্জামান বলেন, “গুজব বা আতঙ্ক না ছড়িয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে সচেতন হওয়ার অাহবান জানাচ্ছি।
১. পৃথিবীর অন্যতম ঘন জনবসতিপূর্ণ দেশ হিসেবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের বিষয়। বাংলাদেশের জন্য বিমানবন্দরের চাইতেও অনেক ক্ষেত্রে স্থল ও নৌবন্দরগুলো অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, কেননা আমদানি-রপ্তানির জন্য আমরা এই বন্দরগুলো বেশি ব্যবহার করে থাকি। সুতরাং বিমানবন্দরে নজরদারি জারি রাখার পাশাপাশি স্থল ও নৌবন্দরগুলোতে সরকারের অস্থায়ী মেডিকেল পোস্ট স্থাপন ও জরুরি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা উচিত।
২. ঢাকা শহরের কিছু হাসপাতাল এই পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য কিছুটা প্রস্তুত হলেও সারাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের হাসপাতাল ও চিকিৎসাসেবা করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণের জন্য অপ্রতুল। গত বছর ঢাকার বাইরে যেভাবে ডেঙ্গুর বিস্তার হয়েছে তাতে করে দেশের সবগুলো জেলা শহরে ও ইউনিয়ন পর্যায়ে একাধিক হাসপাতাল ও মেডিকেল টিম সার্বক্ষণিকভাবে প্রস্তুত রাখা দরকার। যেহেতু বিদেশ প্রত্যাগত শ্রমিক ও প্রবাসীরা বেশিরভাগ সময়ে সরাসরি গ্রামে চলে যান, তাই তারা যাতে আক্রান্ত হলে তাৎক্ষণিক সেবা ও পরামর্শ পেতে পারেন সেই ব্যবস্থা রাখতে হবে।
৩. টেলিভিশন, রেডিও, অনলাইন ও প্রিন্ট মিডিয়ায় সরকার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর করোনা ভাইরাস বিষয়ক জরুরি তথ্য-উপাত্ত নিয়মিত প্রচার করা জরুরি। এছাড়াও বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হলে সব রোগীকে ভর্তি করে বিচ্ছিন্ন রাখার মতো পর্যাপ্ত বেড আমাদের হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে নেই। তাই এই ক্ষেত্রে বর্তমানে ক্যানাডার গৃহীত পদক্ষেপ ‘self-isolation’ কার্যকরী হতে পারে। এই ক্ষেত্রে রোগী করোনাভাইরাস পজিটিভ হলে সে নিজস্ব তত্ত্বাবধানে ১৪ দিনের জন্য নিজ ঘরে বিচ্ছিন্ন থাকবে। এমতাবস্থায়ও প্রয়োজনের সময় তৎক্ষণাৎ চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা দরকার।
৪. সরকার চীনে প্রচুর হ্যান্ড স্যানিটাইজার, টিসু, টয়লেট পেপার পাঠিয়েছিলো, যা প্রশংসনীয়। নিজের দেশের জনগণও যাতে তাদের প্রয়োজনীয় মাস্ক, স্যানিটাইজার, সাবান, টিসু, টয়লেট পেপার ইত্যাদি প্রয়োজনের সময় পায়, সেই ব্যবস্থা সরকারকেই নিতে হবে।
৫. বাজার নিয়ন্ত্রণ সরকারের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। খুব স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন দেশের সরকার যেভাবে মানুষকে self-isolation, অর্থাৎ নিজের ঘরের মধ্যে আবদ্ধ রাখতে বলছে, তাতে করে মানুষ বাজার-ঘাটে কম যেতে চাইবে, এবং ফলশ্রুতিতে জিনিসপত্র কিনে ঘরে রেখে দিতেও চাইবে। সরকারকে মানুষকে আশ্বস্ত করতে হবে যে নিয়মিত হাত ধুলে, ঘরের বাইরে কিছু স্পর্শ না করলে, বা স্পর্শ করে নাক-মুখ-চোখ ধরার আগে হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে নিলে কোন চিন্তা নেই। সেইক্ষেত্রে একবারে একমাসের বাজার করে রাখারও প্রয়োজন নেই। ৬. ইরান বা যুক্তরাজ্যে সরকারের শীর্ষ এমপি, মন্ত্রীরা করোনাতে আক্রান্ত হয়েছেন। এটাকে ভয় হিসেবে না দেখে সরকারের দায়িত্ব নিয়ে নিজেদের করোনা টেস্ট করে মানুষকে রিপোর্ট জানানো উচিত স্বচ্ছতার খাতিরে। মিডিয়া হাউজগুলোও নিজ উদ্যেগে নিজেদের করোনা টেস্ট করে পত্রিকার মাধ্যমে মানুষকে জানাতে পারে।
৭. এই প্যানডেমিকে চিকিৎসক, নার্স ও সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের কিন্তু কোনো মুক্তি নেই। তারা চাইলেও নিজেদের self-isolation এ নিতে পারবেন না, যেমনটি পারেননি ডেঙ্গুর ক্ষেত্রেও। তাই ডাক্তার, নার্স ও চিকিৎসা কিংবা জনস্বাস্থ্যসেবা পেশাজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা রাখুন, আস্থা রাখুন। তাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ান। তারা যাতে নিজেদের অসহায়বোধ না করেন।”