স্টাফ রিপোর্টার” শেখ জুয়েল রানা’
ঢাকা, ১৯ মার্চ ২০২০: বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো আজ এক বিবৃতিতে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির দ্রুত অবনতিতে গভীর উৎকণ্ঠা এবং এ যাবত গৃহীত ব্যবস্থায় হতাশা ব্যক্ত করে বলেছে কেবল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপর নির্ভর করে নয়, সমগ্র সরকারকেই এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ উদ্যোগ নিয়ে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

বিবৃতিতে বলা হয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে যেখানে মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানাদি সীমিত করে দেয়া হয়েছে, সেখানে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান, নেতৃত্বদানকারী প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিবর্গ তাদের অতি উৎসাহ ও উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে সন্তুষ্ট রাখতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদি করে চলেছে। বিশ্বের সর্বত্র বিভিন্ন দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা, কারফিউ জারি, ঘরে বসে কাজ করতে বলা হচ্ছে সেখানে বাংলাদেশে পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে দেখাতে এ ধরনের জরুরি কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। এর ফলে সাধারণ মানুষও পরিস্থিতির গুরুত্ব সঠিকভাবে অনুধাবন করতে পারছে না, পক্ষান্তরে চরম বিশৃঙ্খল ও দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ করছে। বিশেষ করে দেশে ফিরে আসা প্রবাসীরা তাদের ‘হোম কোয়রেন্টাইনে’ থাকতে বলার পরও কোন প্রকার বাধা মানছে না। মানুষের সাথে মিশছে।
ওয়ার্কার্স পার্টি মনে করে এক্ষেত্রে সরকারের, বিশেষ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সমধিক। বিমানবন্দরে পরীক্ষা ও শনাক্তকরণে অবহেলা, প্রবাসীদের প্রথম থেকেই প্রতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে না নেয়া, করোনা ভাইরাস সনাক্তকরণে মাত্র একটি ল্যাবরেটরির উপর নির্ভর করা এসবই চরম দায়িত্বহীনতার পরিচায়ক। সরকার চীনে আটকাপড়া শিক্ষার্থীদের দেশে ফিরিয়ে এনে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে রাখার যে পদক্ষেপ নিয়েছিল তাকেই অনুসরণ করা প্রয়োজন ছিল। সেখানে ইতালি, সৌদী আরবসহ বিশেষভাবে আক্রান্ত দেশসমূহ থেকে আসা প্রবাসীদের কোন ব্যবস্থা ছাড়াই নিজ নিজ বাড়িতে ফিরিয়ে দেয়ার পরিণতিই হয়েছে বর্তমানে করোনা সংক্রমণের ক্রম বিস্তৃতি ও একজনের মৃত্যু। রোগতত্ব বিভাগ এখন সুস্পষ্টভাবেই বলছে যে পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হবে। আর এ ক্ষেত্রে সবচাইতে দুভার্গ্যজনক চিকিৎসক ও চিকিৎসাসেবা কর্মীদের নিজেদের রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পোশাক ও অন্যান্য ব্যবস্থা না থাকা।
ওয়ার্কার্স পার্টি ইতিপূর্বেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত অপ্রস্তুতি ও গা-ছাড়া মনোভাবের কথা বলেছিল এবং এ ব্যাপারে স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল। কিন্তু স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিপুল সংখ্যক কমিটি গঠন- যা বাস্তবে অনুপস্থিত ও সংবাদ মাধ্যমে বাগাড়াম্বর পূর্ণ কথা বলা ছাড়া এক্ষেত্রে যে দৃঢ়চেতা নেতৃত্ব দেয়া প্রয়োজন ছিল তা করতে চ‚ড়ান্তরূপে ব্যর্থ হয়েছেন। এ ব্যাপারে ওয়ার্কার্স পার্টি ডেঙ্গু প্রতিরোধেও তার উপেক্ষা ও উপহাসের মনোভাবের কথা উল্লেখ করেছিল। এই মুহূর্তে এ ধরনের মনোভাব পরিহার করে করোনা প্রতিরোধে এ ধরনের ব্যর্থতার সরকারের সমস্ত অংশ, রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে।
ওয়ার্কার্স পার্টি মনে করে (১) প্রবাসীদের দ্বারা ছড়িয়ে পড়া এই সংক্রমণ বিস্তার ঠেকাতে তাদের অবশ্যকীয়ভাবে প্রতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে নিয়ে আসা, (২) যাদের সংক্রমিত হবার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে তাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা বাধ্যতামূলক করা, (৩) সকল প্রকার জনসমাবেশ ও জনসম্পৃক্তিমূলক কর্মসূচি স্থগিত করা, (৪) করোনা শনাক্তকরণে আরও অনেক কয়টি ল্যাবরেটরি, বিশেষ করে বিভাগীয় শহরে ল্যাবরেটরি স্থাপন (৫) চিকিৎসক ও চিকিৎসা সেবাকর্মীদের জন্য যথোপযুক্ত পোশাক সরবরাহ নিশ্চিত করা (৬) করোনা শনাক্তকরণ কীটস বিপুল পরিমাণে দ্রুত সংগ্রহের ব্যবস্থা করা ও সর্বোপরি (৭) গণমাধ্যমসহ দেশের সর্বত্র জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ জরুরি।
ওয়ার্কার্স পার্টি বিশ্বাস করে দুর্যোগ মোকাবেলায় অভিজ্ঞ বাংলাদেশের মানুষ সঠিক সহায়তা পেলে করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সক্ষম হবে। ওয়ার্কার্স পার্টি একই সাথে পার্টির সমস্ত ইউনিটকে করোনা প্রতিরোধে করণীয়সমূহ কঠোরভাবে অনুসরণ ও এলাকার মানুষকে তা অনুসরণ করতে উৎসাহী ও সচেতন করার জন্য কর্মসূচি নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রোধে কর্মস্থলের প্রস্তুতি ও করণীয় সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র নির্দেশনাকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য, অারপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ অামিরুজ্জামান বলেন, “গুজব বা আতঙ্ক না ছড়িয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে সচেতন হওয়ার অাহবান জানাচ্ছি।
১. পৃথিবীর অন্যতম ঘন জনবসতিপূর্ণ দেশ হিসেবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের বিষয়। বাংলাদেশের জন্য বিমানবন্দরের চাইতেও অনেক ক্ষেত্রে স্থল ও নৌবন্দরগুলো অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, কেননা আমদানি-রপ্তানির জন্য আমরা এই বন্দরগুলো বেশি ব্যবহার করে থাকি। সুতরাং বিমানবন্দরে নজরদারি জারি রাখার পাশাপাশি স্থল ও নৌবন্দরগুলোতে সরকারের অস্থায়ী মেডিকেল পোস্ট স্থাপন ও জরুরি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা উচিত।
২. ঢাকা শহরের কিছু হাসপাতাল এই পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য কিছুটা প্রস্তুত হলেও সারাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের হাসপাতাল ও চিকিৎসাসেবা করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণের জন্য অপ্রতুল। গত বছর ঢাকার বাইরে যেভাবে ডেঙ্গুর বিস্তার হয়েছে তাতে করে দেশের সবগুলো জেলা শহরে ও ইউনিয়ন পর্যায়ে একাধিক হাসপাতাল ও মেডিকেল টিম সার্বক্ষণিকভাবে প্রস্তুত রাখা দরকার। যেহেতু বিদেশ প্রত্যাগত শ্রমিক ও প্রবাসীরা বেশিরভাগ সময়ে সরাসরি গ্রামে চলে যান, তাই তারা যাতে আক্রান্ত হলে তাৎক্ষণিক সেবা ও পরামর্শ পেতে পারেন সেই ব্যবস্থা রাখতে হবে।
৩. টেলিভিশন, রেডিও, অনলাইন ও প্রিন্ট মিডিয়ায় সরকার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর করোনা ভাইরাস বিষয়ক জরুরি তথ্য-উপাত্ত নিয়মিত প্রচার করা জরুরি। এছাড়াও বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হলে সব রোগীকে ভর্তি করে বিচ্ছিন্ন রাখার মতো পর্যাপ্ত বেড আমাদের হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে নেই। তাই এই ক্ষেত্রে বর্তমানে ক্যানাডার গৃহীত পদক্ষেপ ‘self-isolation’ কার্যকরী হতে পারে। এই ক্ষেত্রে রোগী করোনাভাইরাস পজিটিভ হলে সে নিজস্ব তত্ত্বাবধানে ১৪ দিনের জন্য নিজ ঘরে বিচ্ছিন্ন থাকবে। এমতাবস্থায়ও প্রয়োজনের সময় তৎক্ষণাৎ চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা দরকার।
৪. সরকার চীনে প্রচুর হ্যান্ড স্যানিটাইজার, টিসু, টয়লেট পেপার পাঠিয়েছিলো, যা প্রশংসনীয়। নিজের দেশের জনগণও যাতে তাদের প্রয়োজনীয় মাস্ক, স্যানিটাইজার, সাবান, টিসু, টয়লেট পেপার ইত্যাদি প্রয়োজনের সময় পায়, সেই ব্যবস্থা সরকারকেই নিতে হবে।
৫. বাজার নিয়ন্ত্রণ সরকারের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। খুব স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন দেশের সরকার যেভাবে মানুষকে self-isolation, অর্থাৎ নিজের ঘরের মধ্যে আবদ্ধ রাখতে বলছে, তাতে করে মানুষ বাজার-ঘাটে কম যেতে চাইবে, এবং ফলশ্রুতিতে জিনিসপত্র কিনে ঘরে রেখে দিতেও চাইবে। সরকারকে মানুষকে আশ্বস্ত করতে হবে যে নিয়মিত হাত ধুলে, ঘরের বাইরে কিছু স্পর্শ না করলে, বা স্পর্শ করে নাক-মুখ-চোখ ধরার আগে হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে নিলে কোন চিন্তা নেই। সেইক্ষেত্রে একবারে একমাসের বাজার করে রাখারও প্রয়োজন নেই। ৬. ইরান বা যুক্তরাজ্যে সরকারের শীর্ষ এমপি, মন্ত্রীরা করোনাতে আক্রান্ত হয়েছেন। এটাকে ভয় হিসেবে না দেখে সরকারের দায়িত্ব নিয়ে নিজেদের করোনা টেস্ট করে মানুষকে রিপোর্ট জানানো উচিত স্বচ্ছতার খাতিরে। মিডিয়া হাউজগুলোও নিজ উদ্যেগে নিজেদের করোনা টেস্ট করে পত্রিকার মাধ্যমে মানুষকে জানাতে পারে।
৭. এই প্যানডেমিকে চিকিৎসক, নার্স ও সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের কিন্তু কোনো মুক্তি নেই। তারা চাইলেও নিজেদের self-isolation এ নিতে পারবেন না, যেমনটি পারেননি ডেঙ্গুর ক্ষেত্রেও। তাই ডাক্তার, নার্স ও চিকিৎসা কিংবা জনস্বাস্থ্যসেবা পেশাজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা রাখুন, আস্থা রাখুন। তাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ান। তারা যাতে নিজেদের অসহায়বোধ না করেন।”