কবি অসিত দেব ৫৬ বছর পূর্ণ করলেন অাজ: জন্মদিনে শুভ কামনা সকলের
মৌলভীবাজার, ০১ এপ্রিল ২০২০: কবি অসিত দেব ৫৬ বছর পূর্ণ করলেন অাজ।
কবি অসিত দেবের জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অনেকেই। শুভ কামনা সকলের।
কবি অসিত দেবের জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য, আরপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ আমিরুজ্জামান।
সৈয়দ অামিরুজ্জামান জানান কবিতা প্রসঙ্গে বাংলার প্রকৃতির রূপবৈচিত্র্যে নিমগ্নচিত্ত অাধুনিক জীবনচেতনার কবি জীবনানন্দ দাশ লিখেছেন, “কবিতা রচনার পদ্ধতি সম্পর্কে সংক্ষেপে বলতে পারা যায় এই: যখনই ‘ভাবাক্রান্ত’ হই, সমস্ত ভাবটা বিভিন্ন আঙ্গিকের পোশাকে ততটা ভেবে নিতে পারি না, যতটা অনুভব করি- একই এবং বিভিন্ন সময়ে। অন্ত\প্রেরণা আমি স্বীকার করি। কবিতা লিখতে হলে ইমাজিনেশনের দরকার; এর অনুশীলনের। এই ইমাজিনেশন শব্দটির বাংলা কি? কেউ হয়ত বলবেন কল্পনা কিংবা কাবকল্পনা অথবা ভাবনা। আমার মনে হয় ইমাজিনেশন মানে কল্পনাপ্রতিভা বা ভাব-প্রতিভা। বুদ্দি-ধী-সকলেরই আছে একথা বলা চলে না। কল্পনা সব মানুষের মনেই সমান বিস্তার ও নিবিড়তা পেয়েছে বা পেতে পারে- এ কথা মনে করা ঠিক নয। উৎকর্ষের তারতম্য আছে। কল্পনার (ও অন্যান্য মনোদৃষ্টির) সাহায্যে সাহিত্যসৃষ্টি হয়, কিংবা নবীন রাষ্ট্র, অর্থনীতি, বিজ্ঞান। কিন্তু এসব বিভিন্ন ক্ষেত্রে কল্পনা একইভাবে কাজ করে না, তার অস্ত:সারও একই রকমের নয়। যে কবির কল্পনাপ্রতিভা আছে সে ছাড়া আর কেউ কাব্যসৃষ্টি করবার মতো অন্তঃপ্রেরণার দাবি করতে পারে কি? এ প্রেরণা ছাড়া শ্রেষ্ঠ কবিতা লেখা কি করে সম্ভব হতে পারে এই প্রশ্নের উত্তরের মর্যাদায় টের পাওয়া যাবে আলোচনার বিচারসহনশীলতা।
কিন্তু ভাবপ্রতিভাজাত এই অন্তঃপ্রেরণাও সব নয়। তাবে সংস্কারমুক্ত শুদ্ধ তর্কের ইঙ্গিত শুনতে হবে; এ জিনিস ইতিহাস চেতনায় সুগঠিত হওয়া চাই। এই সব কারনেই- আমার পক্ষে অন্তত- ভালো কবিতা লেখা অল্প কয়েক মূহুর্তের ব্যাপার নয়; কবিতাটিকে প্রকৃতিস্থ করে তুলতে সময় লাগে। কোনো কোনো সময় কাঠামোটি, এমন কি সম্পূর্ণ কবিতাটিও, খুব তাড়াতাড়ি সৃষ্টিলোকি হয়ে ওঠে প্রায়। কিন্তু তারপর- প্রথম লিখবার সময় যেমন ছিল তার চেয়ে বেশি স্পষ্টভাবে- চারদিককার প্রতিবেশচেতনা নিয়ে শুদ্ধ প্রবতর্কের আবির্ভাবে , কবিতাটি আরও সত্য হয়ে উঠতে চায়: পুনরায় ভাবপ্রতিভার আশ্রয়ে। এ রকম অঙ্গাঙ্গীযোগে কবিতাটি পরিণতি লাভ করে। এর ফলে আমার এক বন্ধু আমাকে লিখেছেন: ‘কবিতার প্রত্যেকটি আঙ্গিককে স্পষ্ট ও সুসমঞ্জস্য করে তোলে। এতে করে কোনো একটি বিশেষ ছত্রের দাম হয়ত ক্ষুন্ন হয়, কিন্তু সমস্ত নক্সাটার উজ্জলতা চোখে পড়ে বেশি।’ কিন্তু এরকম ঐকান্তিক কবিতা আমি বেশি লিখতে পারিনি। এর কারন, ভাব প্রতিভা তাকে বলয়িত করে বোর অবসর ও শক্তি এবং প্রজ্ঞাদৃষ্টির উপযুক্ত প্রভাব কোনো-না-কোনো কারণে কিচু শিথিল হয়ে গিয়েছিল।
মহাবিশ্বলোকের ইশারার থেকে উৎসারিত সময়চেতনা আমার কাব্যে একটি সঙ্গতিসাধক অপরিহার্য সত্যের মতো; কবিতা লিখবার পথে কিছু দূর অগ্রসর হয়েই এ আমি বুঝেছি, গ্রহন করেছি। এর থেকে বিচ্যুতির কোনো মানে নেই আমার কাছে। তবে সময়চেতনার নতুন মূল্য আবিষ্কার হতে পারে।
আজ পর্যন্ত যে সব কবিতা আমি লিখেছি সে সবে আবহমান মানবসমাজকে প্রকৃতি ও সময়ের শোভাভূমিকায় এক ‘অনাদি’ তৃতীয় বিশেষত্ব হিসাবে স্বীকার করে, কেবলমাত্র তারই ভিতর থেকে উৎস-নিরুক্তি খুঁজে পাইনি। নাট্যকবির পক্ষে এটা পাওয়া প্রয়োজন। প্রতিভাসিক কবিতাজগতের একাগ্রতা ভেঙে ফেরে তাকে নাট্যপ্রাণ বিশুদ্ধতা দেয় সেই কবি। কিন্তু তবুও তিন জগতেই বিচরণ করে সে- মানবসমাজকেই চিনে নেবার ও চিনিয়ে দেবার মূখ্যতম প্রয়োজনে আন্তরিক হয়ে ওঠে। লিরিক কবিও ভূবনচারী, কিন্তু তার বেলায় প্রকৃতি, সমাজ ও সময়অনুধ্যান কেউ কাউকে প্রায় নির্বিশেষে ছাড়িয়ে মূখ্য হয়ে ওঠে না; অন্তত মানবসমাজের ঘনঘটায় প্রকৃতি ও সময়ভাবনা দূর দুর্নির্যী হয়ে মিলিয়ে যাবার মতো নয। কাজেই উপন্যাস ও নাটকের মতো মানুষমনকে সমূলে আক্রান্ত না করেও, কবিতা মানসের আমূল বিপর্যয় ঘটিয়ে দিতে পারে- তাকে নির্মলতর করে তুলবার জন্য- কথা ও ইঙ্গিতের দুর্লভ স্বল্পতার ভিতর দিয়ে।
কোনো কিছু ‘চরম’ মনে করে সুস্থিরতা লাভ করবার চেষ্টায় আত্নতৃপ্তি নেই; রয়েছে বিশুদ্ধ সৃষ্টি করবার প্রয়াস- যাকে কবিজগৎ বলা যেতে পাবে- নিজের শুদ্ধ নিঃশ্রেয়স মুকুরের ভিতর বাস্তবকে যা ফলিয়ে দেখাতে চায়। এতে করে বাস্তব বাস্তবই থেকে যায় না; দুয়ের একটা সমন্বয়ে সেতুলোক তৈরি হয়ে চলতে থাকে এক থেকে অপর যুগে- কোনো পরিনির্বাণের দিকে, কারু মতে; অল্পাধিক শুভ পরিচ্ছন্ন সমাজপ্রয়াণের দিকে, অন্য কারু ধারণায়; কবিজগতে যে পাঠকেরা ভ্রমণ করেছেন তাঁদের মন।
আমিও সাময়িকভাবে কোনো কোনেনে (কিংবা হাতে) ইহজগৎ আবার নতুন করে পরিকল্পিত হবার সুযোগ পায় তাই জিনিসকে ‘চরম’ মনে করে নিয়েছি জীবনের ও সাহিত্যের তাগিদে, মনকে চোখঠার দিয়ে মাঝে মাঝে- টেম্পররি সস্পেনশন্ অব ডিজবিলিফ হিসেবে। কিংবা কখনো-কখনো মনকে এই বরে বুঝিয়েছি যে, যাকে আমি শেষ সত্য বলে মনে করতে পারছি না, তা তবুও আমাদের আধুনিক ইতিহাসের দিক-নির্ণয়-সত্তা; আজকের প্রয়োজনে চরম ছাড়া হয়ত আর কিছু নয়। কিন্তু তবুও সময়-প্রসূতির পটভূমিকায় জীবনের সম্ভাবনাকে বিচার করে মানুষের ভবিষ্যত সম্পর্কে আস্থা লাভ করতে চেষ্টা করেছি। অনেকদিন ধরেই পরিপ্রেক্ষিতের আবছায়া এত কঠিন যে, এর চেয়ে বেশি কিছু আয়ত্ত করা আধুনিকদের পক্ষে অসম্ভব না হলেও কিছুটা সুদূরপরাহত।”

কবি অসিত দেবের জন্মদিনে আরও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক তাপস কুমার ঘোষ, শ্রীমঙ্গল উপজেলা শাখার সভাপতি দেওয়ান মাসুকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক জালাল উদ্দিন এবং শ্রীমঙ্গল পৌর শাখার সভাপতি শেখ জুয়েল রানা ও সাধারণ সম্পাদক মো. রোহেল আহমদ।